করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরকারের কাছে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা সুদমুক্ত প্রণোদনা দাবি করেছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
হাব সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, হজ, ওমরাহ, ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট এ গুরত্বপূর্ণ খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং এ খাতের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য প্রণোদনা প্রয়োজন।
বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের জন্য অর্থমন্ত্রী বরাবর গত ১০ এপ্রিল ইমেইলে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান হাব সভাপতি।
চিঠিতে উল্লেখ করা হাবের প্রস্তাবে রয়েছে - হজ ও ওমরাহ এজেন্সিসমূহের ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া ক্ষতিপূরণে নগদ প্রণোদনা প্রদান; হজ ও ওমরাহ এজেন্সিসমূহের জন্য ১৫০০ কোটি টাকা সুদমুক্ত ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণের ব্যবস্থাকরণ; ট্রাভেল এজেন্ট ও ট্যুর অপারেটরদের জন্য প্রয়োজনীয় নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ-১ এর আওতায় ট্রাভেল এজেন্ট ও ট্যুর অপারেটরদের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ প্রদানের ব্যবস্থাকরণ।
হাব সভাপতি তাসলিম বলেন, হাবের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ২৩৮ হলেও এজেন্সিসমূহের মালিকসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা সর্বসাকুল্যে প্রায় ২০ হাজার। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাসিক বেতন এবং অফিস ভাড়া ও অন্যান্য খরচসহ মাসে প্রায় ৫০ কোটি টাকা এজেন্সিসমূহের ব্যয় হয়।
এছাড়াও এ পেশার সাথে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে ও সৌদিআরবে আরও প্রায় এক লাখ লোক নিয়োজিত আছে। বাংলাদেশের মোট হাজযাত্রীর প্রায় ৯৬ ভাগ এবং ওমরাহযাত্রীর শতভাগ কার্যাদি হাব সদস্য হজ ও ওমরাহ এজেন্সির প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হজ, ওমরাহ, ট্রাভেল ও ট্যুরিজম খাত। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সৌদি সরকার ওমরাহ বন্ধের ঘোষণার পর তাদের ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। কারণ তারা প্রায় ১০ হাজার ওমরাহ যাত্রীর ভিসা, এয়ার টিকিট, মক্কায় হোটেল ভাড়াসহ পূর্ণ প্যাকেজে মূল্য পরিশোধ করেছিলেন।
অধিকন্তু আসন্ন রমজানে ওমরাহ হজে গমনকারীর জন্য আরও ৫ হাজার এয়ার টিকিট অগ্রিম ক্রয় করা ছিল যার মূল্য ২৫ কোটি টাকা। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন ও অন্যান্য অফিস ব্যয়সহ প্রায় ৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এ বাবদ নিট লোকসানের পরিমাণ ১৭৫ কোটি টাকা।
হাব সভাপতি তাসলিম বলেন, আগামী রমজান পর্যন্ত কমপক্ষে আরও ১ লাখ ওমরাহ যাত্রীর ওমরাহ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এক্ষত্রে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ হতো প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। অধিকন্তু, এবছর বেসরকারিভাবে ১ লাখ ২০ হাজার হজযাত্রী হজ পালনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। যদি কোনো কারণে ২০২০ সালে বাংলাদেশের হজযাত্রীরা পবিত্র হজে যেতে না পারেন, তাহলে এ বাবদ ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষতির পরিমাণ হবে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যে লোকসান পূরণের কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।
তাছাড়া, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত হজ ও ওমরাহ এজেন্সিসমূহের জনপ্রতি ব্যয়- যেমন অফিস ভাড়া ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি মাসিক প্রায় ৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ সর্বমোট ব্যবসায়িক লেনদেন এবং নিট ক্ষতির পরিমাণ হবে ৬ হাজার ১২৫ কোটি টাকা।
অনেক এজেন্সি পুরো বছরের অফিস ভাড়া ও কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করার সক্ষমতা হারাবে। করোনাভাইরাসের কারণে এ খাতটি ক্ষতিগ্রস্থ হলে আগামীতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১০ হাজার কর্মচারী এবং বাংলাদেশে ও সৌদি আরবের প্রবাসী বাংলাদেশিসহ পরোক্ষভাবে জড়িত ৫০ হাজার ব্যক্তির চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
হাব সদস্যদের সবাই ট্রাভেল এজেন্ট এবং ট্যুর অপারেটর এবং পর্যটন শিল্পের অন্যান্য খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এবং এ খাতগুলোতেও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।