স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত করোনা লাইভ বুলেটিন ফের চালুর পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। শুধু তাই নয়, বুলেটিন প্রচারের পাশাপাশি সপ্তাহে একবার গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকা উচিত মনে করেন কমিটির সদস্যরা।
বুধবার (১৯ আগস্ট) জাতীয় পরামর্শক কমিটির ১৭তম অনলাইন সভায় এ পরামর্শসহ কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
সভায় নিম্নলিখিত প্রস্তাব গৃহীত হয়
১. কোভিড-১৯ মোকাবিলায় টিকার গুরুত্ব বিবেচনা করে এ বিষয়ে জাতীয় পরামর্শক কমিটি নিম্নলিখিত প্রস্তাব পেশ করেছে-
ক) টিকা আন্তর্জাতিক বাজারে এসে গেলে তা কীভাবে প্রথমেই বাংলাদেশ নিয়ে আসা যায় তার বিস্তারিত পরিকল্পনা এখনই করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে কী পরিমাণ টিকার প্রয়োজন তা সংগ্রহে কত খরচ হবে কিংবা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে কিনা এ ব্যাপারে এখনই হিসাব করা প্রয়োজন। এখন থেকেই যেসব প্রতিষ্ঠান বা দেশ টিকার ট্রায়ালের তৃতীয় পর্যায়ে আছে তাদের সাথে যোগাযোগ করা উচিত যেন টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতি পাওয়া মাত্রই বাংলাদেশ পেতে পারে। টিকা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সিরিঞ্জ উৎপাদন বা ক্রয় করার প্রস্তুতি থাকতে হবে। টিকাপ্রাপ্তির পর এটি সংরক্ষণ (স্পেস উইথ কোল্ড চেইন), বিতরণ, লোকবল, সরঞ্জামসহ সকল পরিকল্পনা/ব্যবস্থাপনা (মাইক্রো প্ল্যানিং) এখনই ঠিক করে রাখা উচিত।
টিকাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোন উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যা অগ্রাধিকার পাবে, দ্বিতীয়-তৃতীয় অগ্রাধিকার কোন জনগোষ্ঠী সেটা নির্ধারণ করে রাখা প্রয়োজন। সাধারণত প্রথম ব্যবহারযোগ্য ভ্যাকসিন/টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। নিম্ন মাথাপিছু আয়ের দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিনামূল্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক টিকা দিয়ে থাকে এবং কোভিড-২৯ ভ্যাকসিন ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করা হবে যেটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই ফাস্ট ট্র্যাকের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্যে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা সে দেশের সরকারের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করা এবং প্রয়োজনীয় অগ্রিম অর্থ প্রদান করার প্রয়োজন হতে পারে।
খ) কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার কার্যক্রমের অংশ বাংলাদেশে হওয়া উচিত। বিশ্বের যে সকল দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, রাশিয়া টিকার গবেষণা এগিয়ে আছে, তারা তাদের টিকার তৃতীয় পর্যায়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অন্যান্য দেশও অংশগ্রহণ করছে। যেমন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল ভারতে হচ্ছে, চীনের লিনোভো ব্রাজিল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও তুরস্কে হচ্ছে। বাংলাদেশ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হলে প্রথমত এর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তা প্রমাণের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং এই টিকা সফল প্রমাণিত হলে সর্বাগ্রে পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া থাকবে।
২. সরকারিভাবে কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য বর্তমানে ধার্যকৃত মূল্য পরিবর্তন করা প্রয়োজন। সন্দেহভাজন করোনা রোগী হাসপাতালে এসে টেস্টের জন্য নমুনা দেয়ার ক্ষেত্রে বিনামূল্যে এবং বাসায় স্বাস্থ্যকর্মী গিয়ে নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৩০০ টাকা করার পরামর্শ প্রদান করা হয়।
৩. স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত লাইভ বুলেটিন চালু রাখার পক্ষে এ সভা মত প্রদান করেছে। এর পাশাপাশি সপ্তাহে একবার গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকা উচিত বলে এ সভা মনে করে।
৪. হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের পর ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের বিভিন্ন হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যবস্থা বর্তমানে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের পর মানসম্মত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অন্যথায় শুধু স্বাস্থ্যকর্মী নয়, তাদের পরিবার-পরিজন করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।