বৈশ্বিক মহামারি করোনার ধাক্কা সামলিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে অ্যাভিয়েশন খাত। যদিও করোনার প্রকোপ তেমনভাবে কমেনি।
তারপরও প্রতি মাসেই বাড়ছে প্লেনের যাত্রী সংখ্যা। করোনার কারণে বন্ধ হওয়া রুটে পুনরায় শুরু হচ্ছে ফ্লাইটও।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এ খাত ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, আগস্ট পর্যন্ত গড়ে ৮০ শতাংশ যাত্রী বেড়েছে বিভিন্ন রুটে। এ গতি অব্যাহত থাকলে শিগগিরই শতভাগে পৌঁছাবে যাত্রী সংখ্যা।
বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণ বাড়লে গত মার্চ মাস থেকে দেশে দেশে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গত ২৪ মার্চ বাংলাদেশেও প্লেন চলাচল বন্ধ করে দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ফলে বাংলাদেশও পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
দুই মাস বন্ধ থাকার পর করোনাকালেই গত ১ জুন থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে প্লেন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু করোনার আতঙ্ক থাকায় প্রথম দিকে যাত্রী সংকটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সবগুলো ফ্লাইট বাতিল করে। যাত্রী সংকটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ারও কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল করে।
অভ্যন্তরীণ রুটের পর গত ১৬ জুন থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় বেবিচক। তখন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস এয়ারলাইন্স, টার্কিশ এয়ারলাইন্সসহ বিদেশি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চায়। ২১ জুন দীর্ঘদিন পর ঢাকা থেকে লন্ডনে প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান। জুলাই থেকে ঢাকায় টার্কিশ, এমিরেটস, এয়ার অ্যারাবিয়া, কাতার এয়ারওয়েজসহ কয়েকটি এয়ারলাইন্স ঢাকায় ফ্লাইট পরিচালনার শুরু করে। শুরুতে সপ্তাহে দুইটি ফ্লাইট চালালেও আগস্ট মাসের শুরুতে সবকটি এয়ারলাইন্সই ফ্লাইট বাড়িয়েছে।
এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ রুটে জুনে গড়ে ১০-১৫ ভাগ যাত্রী ছিল। সেটা এখন বেড়ে গড়ে, ৮০-৯০ শতাংশে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য যে ২৫ শতাংশ আসন খালি রাখতে হয়, সেটা তুলে দিলে শতভাগ যাত্রী বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র বলছে, করোনাকালে দীর্ঘদিন পর গত জুলাই মাসের শেষের দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লন্ডন, আবুধাবি ও দুবাই রুটে ফ্লাইট চালু করে। কুয়েত রুটেও ফ্লাইট ৪ আগস্ট থেকে চালুর ঘোষণা দেয় বিমান। কিন্তু বাংলাদেশি যাত্রীর ওপর কুয়েত নিষেধাজ্ঞা দিলে সেই ফ্লাইট অবশ্য স্থগিত করা হয়। শুরুতে দুবাই ও আবুধাবিতে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চালালেও আগস্ট থেকে এ দুই রুটে সপ্তাহে ৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান।
নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর ১ জুন থেকেই অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালু করে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। দেশের সাত গন্তব্যে শুরুতে সীমিত ফ্লাইট থাকলেও জুলাই মাসে সবকটি রুটে ফ্লাইট বাড়ায় সংস্থাটি। সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম ও যশোরে দিনে সর্বোচ্চ ৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে তারা। কক্সবাজার রুটেও যাত্রীদের ব্যাপক টিকিটের চাহিদা রয়েছে বলে জানান এয়ারলাইন্সটির কর্মকর্তারা।
আগস্ট থেকে আন্তর্জাতিক রুটেও ফ্লাইট চালু করেছে সংস্থাটি। দীর্ঘদিন পর আগস্ট মাসে কুয়ালালামপুর ও দোহায় পুনরায় ফ্লাইট চালু করেছে ইউএস-বাংলা। শুরুতে সপ্তাহে দুই ফ্লাইট থাকলেও আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া গুয়াংজুতেও সপ্তাহে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে দেশের শীর্ষ বেসরকারি এই উড়োজাহাজ সংস্থা।
বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোএয়ারও করোনাকালে ১ জুন থেকেই অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে। শুরুতে যাত্রী কম থাকায় অল্প ফ্লাইট পরিচালনা করেছ এয়ারলাইন্সটি। তবে করোনার ভয় কাটিয়ে ওঠায় যাত্রী বাড়তে থাকায় চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, যশোর রুটে দিনে ৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। যদিও শুরুতে এসব রুটে ফ্লাইট সংখ্যা ছিল তিনটি। যাত্রীর অভাবে অনেক ফ্লাইট বাতিলও করতে হয় তখন।
কিন্তু যত সময় যাচ্ছে, সকল এয়ারলাইন্সেই যাত্রী সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি ফ্লাইট সংখ্যাও। ফলে পুরনো রুটে ফ্লাইট চালু করছ এয়ারলাইন্সগুলো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম, জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, করোনার ভয় কাটিয়ে ওঠায় যাত্রী বাড়ছে। ৭৫ শতাংশ যাত্রী নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় ২৫ শতাংশ আসন ফাঁকা থাকে। তবুও যাত্রী বেড়েছে গড়ে ৮০-৯০ শতাংশ। অ্যাভিয়েশন শিল্প ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ধারায় ফিরছে।