বলতে গেলে বর্তমান নগর জীবনের ব্যস্ততায় দম ফেলার সময় পায় না সাধারণ মানুষ। কেউ ব্যস্ত থাকে অফিস নিয়ে, কেউ ব্যস্ত থাকে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আবার স্কুল কলেজের লেখাপড়ার চাপে অনেকে দিশেহারা হয়ে যায। শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য সকলের সবার আগে দরকা একটু অবসরে সময় কাটানো। কাজের একঘেয়েমী দূর করতে কাছে দুরে যেখানেই হোক একটু কোথাও ঘুরে আসলে, শরীর থাকে সুস্থ আর মন থাকে সতেজ। বছরের শুরুর সময় অনেকের জন্য পিকনিক করার জন্য সবচেয়ে সুবিধা-জনক সময়।
এ সময় স্কুল কলেজ কলেজগুলোতে লেখাপড়ার একটু চাপ কম থাকে আর কর্পোরেট কোম্পানি গুলো এই সময় বেছে নেয় বাৎসরিক পিকনিক আয়োজনের বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবারের সকলকে নিয়ে আনন্দময় একটা দিন কাটানোর জন্য চাই মনের মতো একটা জায়গা যেখানে রকমারি বিনোদন আর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশেষত বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত খোলা মাঠ কিংবা সবুজ পার্ক কোনটাই পাওয়া যায না। ফলে পিকনিক ঠিক আনন্দময় হয়ে উঠে না। প্রাচ্যের রাণী খ্যাত চট্টগ্রামে ঘুরে বেড়ানো ও পিকনিক করার মতো অনকগুলো জায়গা থাকলেও ফয়”স লেক কমপেক্স সেরা বলে বিবেচিত হয় অনেকের কাছে। তেমনি শহরের বুক চিরে জেগে উঠা এক খন্ড সবুজের মঝে নীল জলরাশি। ফয়”স লেক কমপেক্স গড়ে উঠেছে ৩৩৬ একর জায়গা জুড়ে।
সবুজের হাতছানি চিরকালই মানুষকে আর্কষণ করে। লেকের স্বচ্ছ জলরাশি আর দুপাশে সংরক্ষিত সবুজ আর দিগন্ত জুড়ে আকাশ যে কোন পর্যটকের মনকে করে তোলে উদাসী। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত লেক। লেকের দুপাশে অবস্থিত অনেকগুলো পাহাড়ের আর্কষণীয় নাম করন করা হয়েছে যেমন আসমানী, গগনদ্বীপ, জলটুঙ্গি ইত্যাদি। লেকের দুপাশে সংরক্ষিত বনে খেলা করে বুনো হরিণ আর খরগোশের দল। এ্খানে রয়েছে লেক ভ্রমনের সুব্যবস্থা। পিকনিকে আগত দর্শনাথীদের জন্য বোট রির্জাভের ব্যবস্থা মাত্র সাতশত পঞ্চাশ টাকায় ত্রিশ মিনিটের জন্য।
আর ও আছে স্পীড বোট ও চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান। আবার কেউ চাইলে প্যাডেল বোট নিয়ে লেক ভ্রমণ করতে পারে। ফয়’স লেক এর প্রবেশ পথ পেরুলেই এক শিহরণ জাগে মনে। আনন্দ-বিনোদনের জন্য আছে মজার মজার গেমস এখান থেকে ছোট্ট একটা সাকো পেরুলেই এ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড রেষ্টুরেন্ট। এখানে পাওয়া যাবে মজার মজার সব খাবার। এই রেষ্টুরেন্টের পাশের লেকেই ফিশিং পয়েন্ট। নানা রকম মাছ খেলা করে এখানে। যে কেউ ইচ্ছে করলে খাবার দিতে পারবে মাছ কে। পিকনিকের খাবার নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই অনেক গুলো ফুড কর্ণার রয়েছে সারা পার্ক জুড়ে । চটপটি, ফূসকা, পপকণ্, কফি, আইসক্রীম, নানা রকম পানীয়। লেকের সামনেই রয়েছে ”লেক ভিউ রেষ্টুরেন্ট ” এখানে রয়েছে পে¬ট ও প্যাকেট সার্ভিস খাবারের ব্যবস্থা। কাঁচ ঘেরা এই রেষ্টুরেন্ট থেকে উপভোগ করা যাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য। রেষ্টুরেন্ট ঘেঁষে গাছগাছালি ভরা ছোট ছোট পাহাড়। এর পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তাটি মিলেছে এ্যাকুয়াটিক কর্ণার নামে পিকনিক স্পটের সাথে। নানা রকম জলজ প্রাণীর ভাস্কর্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এই স্পটটি যা দেখলে মনে হবে এসেছেন কোন স্বপ্নপুরীতে। ’’ফয়’স লেক এ্যামেউজমেন্ট ওর্য়াল্ড” অনেক গুলো রই্ড নিয়ে সাজানো একটি পার্ক।
বাচ্চা ও বড়দের জন্য আছে ভিন্ন ভিন্ন রাইডস্। রাইড গুলো উপভোগ করলে পিকনিক এর পরিপূর্ণ আনন্দ প্ওায়া যাবে। উল্লেখ্যযোগ্য রাইডস্ গুলোর মধ্যে হচেছ ফেরিস হুইল,বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোষ্টার, পাইরেট শীপ। ফেরিস হুইলে উঠলে এক চক্করে দেখা যাবে ’’ফয়’স লেক এ্যামেউজমেন্ট ওর্য়াল্ড”। বাম্পার কার এ চলে খেলনা কার এ চড়ে আরেক জনের কার এ ধাক্কা দেয়ার প্রতিযোগীতা। মনে হবে যেন এক মজার যুদ্ধে নেমেছে সবাই। ফ্যামিলি রোলার কোষ্টার এক সঙ্গে অনেকে উপভোগ করা যায়। দ্রুত গতিতে ফ্যামিলি রোলার কোষ্টার ছাড়লে চিৎকারে মুখরিত হয়ে উঠে পার্ক।
এর পরেই দেখা মিলবে পাইরেট শীপ। এই রাইড্টি শুধু দুলতে থাকে ফলে অনেকেরই মাথা ঘুরে যা অত্যন্ত মজার। বাচচাদের জন্য ’’ফয়’স লেক এ্যামেউজমেন্ট ওর্য়াল্ড” যেন এক স্বপ্নরাজ্য কেননা সাজানো গোছানো এই্ জায়গাতে বাচ্চারা ইচ্ছেমতো ছুটোছুটি করতে পারে। বাচ্চাদের আনন্দ বিনোদনের জন্য সব রকম উপকরণ রয়েছে।
দেশের সর্ববৃহৎ ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ড ফয়’স লেক কমপেক্স এ অবস্থিত। বোট স্টেশন থেকে মাত্র দশ মিনিটের পথ পেরোলেই দেখা মিলবে ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ডের। চট্টগ্রামে পিকনিকের জন্য সবচেয়ে আর্কষণীয় স্থান বিবেচিত হয় ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ড। পানিতে ভিজে আনন্দ উল্লাসে পিকনিক করার মজাই আলাদা। সারাদিন পানি নিয়ে খেলার জন্য রয়েছে অনেকগুলো রাইডস। পানিতে ভেজার জন্য চাই বাড়তি পোশাক আর এরও সুব্যবস্থাা আছে। ভাড়া পাওয়া যায় সব রকম পোশাক। অনেকেই পোশাক ক্রয় করতে চায়, তাদের পোশাক ক্রয়ের জন্য আছে দোকান যেখানে নানারকম জিনিস কিনতে পাওয়া যায়। পোশাক পরিবর্তনের জন্য পুরুষ ও মহিলাদের ভিন্ন ভিন্ন চেঞ্জিং রুম। সী-ওর্য়াল্ডের সবচেয়ে আর্কষণীয় স্থান ওয়েভ পুল, সাগড়ের ঢেউয়ের মতো কৃত্রিম ঢেউ খেলা করে ওয়েভ পুলে। ওয়েভ পুলের সামনের স্টেজে ডিজে শো। কৃত্রিম ঢেউ আর মিউজিক এর তালে তালে নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে আগত দর্শনার্থীরা।
ওয়েভ পুলে টিউবে অনেকেই ভেসে থাকতে মজা পায়। পাশেই ড্যান্সিং জোনে কৃত্রিম বৃষ্টি মন মাতানো মিউজিক আর রঙ্গিন বাতির আলোক ঝর্ণায় নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে হারিয়ে যায় অন্য কোন জগতে। চিলড্রেন পুলে বাচ্চাদের পানিতে খেলার জন্য রয়েছে আর্কষণীয় অনেকগুলো রাাইডস্। দর্শনার্থীদের জন্য ফ্যামিলি পুল অন্যতম আর্কষণীয় রাইড , এই রাইডে চড়লে খুব দ্রুর্ত গতিতে নিচের পানিতে লাফিয়ে পড়ে।
তাই আপনিও নিরাপদ পরিবেশে আনন্দময় পিকনিক করতে চাইলে, চলে আসতে পারেন ফয়’স লেক কমপেক্সে।