করোনাভাইরাসের মহামারি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে ইউরোপের দেশগুলোতে। রাশিয়াসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোয় এখনো কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রোগী রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। আর মারাও গেছেন এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষ। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গোটা ইউরোপ লকডাউন করা হয়েছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঘোষণা অনুসারে জুন থেকে গ্রীষ্মকালীন যে পর্যটন, তাও শুরু হওয়ার কথা। অবস্থার বিচারে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ইউরোপ।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে যুক্তরাজ্যে। দেশটিতে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার। এই পরিস্থিতিতে লকডাউন আরও শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সোমবার (১ জুন) থেকে বাড়ির বাইরে ৬ জন মানুষ এক স্থানে জড়ো হতে পারবে। এই দিন থেকে স্কুলগুলো খুলে যাবে। গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি জানিয়েছেন, গাড়ির শোরুমগুলো এই দিন থেকে খুলে যাবে। খুলে যাবে বিভিন্ন ধরনের খুচরা পণ্যের দোকানও। তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব মেনে আপনারা বাগানে আড্ডা দিতে পারবেন।
"পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশগুলো। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সামাজিক দূরত্বের ওপর।"
এই পথে আরও আগেই হেঁটেছে ইতালি। গত ৭ মার্চ দেশটির উত্তরাঞ্চল প্রথমে লকডাউন করা হয়, এরপর পুরো দেশ। তখন নিয়ম ছিল, বাড়ি থেকে ২০০ মিটারের বাইরে কেউ যেতে পারবে না। মের শুরুর দিকে এই লকডাউন শিথিল করা হয়। এখন দেশটিতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হচ্ছে। ৩ জুন থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসি। ফলে ওই দিন থেকে বিভিন্ন দেশের পর্যটকেরা সেখানে যেতে পারবেন।
এ ছাড়া দেশটির পানশালা ও রেস্তোরাঁগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে ১৮ মে। তবে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো রেস্তোরাঁয় টেবিলের সংখ্যা কমিয়ে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া ফেস শিল্ড ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই দিন থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে সেলুন। তবে স্কুল বন্ধ থাকছে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। জাদুঘর, লাইব্রেরি, দোকান খুলে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন খেলাধুলার ক্লাবগুলো অনুশীলন শুরু করেছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে প্রার্থনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে গির্জাগুলোতেও।
১৭ মার্চ লকডাউন করা হয়েছিল ফ্রান্স। এরপর ১১ মে তা খানিকটা শিথিল করা হয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী এদুয়া ফিলিপ ঘোষণা দিয়েছেন, দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২ জুন আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে। এত দিন নিষেধাজ্ঞা ছিল, ফ্রান্সের কোনো বাসিন্দা বাড়ি থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের বেশি ভ্রমণ করতে পারবেন না। এই নিষেধাজ্ঞা ওই দিন তুলে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
ফ্রান্সে যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি সেগুলোকে রেড জোন, যেখানে সংক্রমণ তুলনামূলক কম সেই এলাকাকে অরেঞ্জ জোন এবং নিরাপদ অঞ্চলগুলোকে গ্রিন জোনে ভাগ করা হয়েছিল। সম্প্রতি প্যারিস রেড জোন থেকে অরেঞ্জ জোনে এসেছে। আর পুরো ফ্রান্সই গ্রিন জোনে পৌঁছাতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্দেশনা অনুসারে পানশালা ও রেস্তোরাঁ খোলা যাবে গ্রিন জোনে। এর আগে ১১ মে সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।
জার্মানিতে সব ধরনের দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে অতিরিক্ত সতর্কতা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টিতে এখনো জোর দেওয়া হয়েছে। স্কুলগুলো আংশিকভাবে খুলে গেছে। ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্তে আরোপিত কড়াকড়ি খানিকটা শিথিল করা হয়েছে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে ।