চলমান করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ফলে দেশের সব অর্থনৈতিক সেক্টর এক বড়সড় ধাক্কার সম্মুখীন। সব খাতের ন্যায় দেশের পর্যটন খাতও ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। পাটা বাংলাদেশ শাখার পক্ষ থেকে কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ পর্যটন খাতের সামগ্রিকভাবে প্রায় ৯ হাজার ৭০৫ কোটি টাকার লোকসানের অনুমান করেছে। শুধু সরাসরি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীনই নয়, কর্মসংস্থানেও কোভিড-১৯ ভয়াবহ পরিণতি আসবে। সংশ্লিষ্ট খাতের ৩ লক্ষাধিক কর্মী চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
মহামারীর লোকসান নিয়েই নয়, সংস্থাটি এর থেকে উত্তরণে সরকারের যেসব পদক্ষেপ ব্যবসাটি পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়েও আলোচনা করেছে। দেশের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোঁরা, ট্যুর অপারেটর, পর্যটক যানবাহন ও জাহাজ ও বেসরকারী বিমান সংস্থাগুলির জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি করে। এর পাশাপাশি লোকসান থেকে পর্যটন খাতের পুনরুদ্ধারের জন্য ২০০০ কোটি টাকার সুদমুক্ত ঋণের বন্দোবস্ত করার জন্যেও সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্যাসিফিক এশিয়া ট্র্যাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পাটা) বাংলাদেশ শাখার মহাসচিব তৌফিক রহমান বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর কাছে বুধবার (১ এপ্রিল) বলেন, ‘২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এয়ারলাইনার, ট্রাভেল এবং ওমরাহ হজ এজেন্টসসহ পুরো পর্যটন খাতে ৯ হাজার ৭০৫ টাকা টার্নওভার অনুমান করেছি। কিন্তু এখন আমাদের সব ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে, এখন আমরা সেই পুরো ব্যবসায়টা হারাতে চলেছি।’
এয়ারলাইনস, অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ট্যুর অপারেটর, হোটেল, মোটেল, রেস্তোঁরা, ট্র্যাভেল এজেন্ট, ওমরাহ এজেন্ট এবং প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ট্রান্সপোর্টসহ পর্যটন খাতের বিভিন্ন অংশের টার্নওভারের একটি পরিমাণ হিসাব করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সংস্থাটি।
পাটা বাংলাদেশ এবং পাটা গ্লোবাল এক্সিকিউটিভ বোর্ডের সদস্য শহীদ হামিদ সচিবালয়ে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলীর কাছে বাংলাদেশ পর্যটন খাতে আনুমানিক লোকসানের প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছে।
তবে, পাটা বাংলাদেশের এই হিসাবে কেবল সংশ্লিষ্ট বেসরকারী খাত অন্তর্ভুক্ত, সরকারি খাত যুক্ত হলে লোকসানের অংকটা আরও বাড়বে। এই ব্যাপারে তৌফিক বলেন, ‘আমরা কেবল বেসরকারী খাত থেকে ব্যবসায়ের ক্ষয়ক্ষতি অনুমান করেছি… আমরা সরকারের মালিকানাধীন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এবং বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনস (বিপিসি) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট খাতের আউটলেট অন্তর্ভুক্ত করিনি।’
তিনি বলেন, এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আটাব), অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রাভেল এজেন্সিস অফ বাংলাদেশ (টোয়াব) এবং হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সহ বিভিন্ন সমিতি তাদের নিজ খাত থেকে ব্যবসায়ের ক্ষতি্র কথা নিশ্চিত করেছে।
বিভিন্ন প্যাকেজ বরাদ্দের পাশাপাশি অপারেশন পুনরায় শুরু না হওয়া পর্যন্ত ইউটিলিটি বিলগুলি মওকুফ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ১৩ ই মার্চ, ওয়ার্ল্ড ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল বলেছে যে, কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে বৈশ্বিক ভ্রমণ ও পর্যটন খাতে ৫ কোটিরও বেশি চাকরি ঝুঁকিতে আছে।
সংকট মোকাবেলায় পর্যটন সংশ্লিষ্টদের কী ধরনের প্রণোদনা প্রয়োজন তা জানতে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের (বিটিবি) প্রধান নির্বাহী প্রধানের নেতৃত্বে একটি ১৪ সদস্যের পর্যটন সঙ্কট পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে।
এই প্রকোপটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় উভয় এয়ারলাইনই বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান ও ভারত সহ বিশ্বব্যাপী বহু গন্তব্যে বাংলাদেশ ও আকাশ পথে প্রায় সমস্ত বিমান চলাচল বন্ধ রেখেছে।
আগামী ৭ই এপ্রিল পর্যন্ত ব্রিটেন বাদে ইউরোপের সমস্ত ভ্রমণকারীদের ওপর বাংলাদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এছাড়াও করোনা ভাইরাসের প্রকোপে অন্যান্য যেসব দেশ বাংলাদেশিদের জন্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে, সেসব দেশের জন্যেও বাংলাদেশের এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য। একই সাথে বন্ধ আছে অন-অ্যারাইভাল ভিসায় প্রবেশ।