নীল জলরাশি। উত্তাল ঢেউ। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। দূরের একেকটি গ্রাম যেন ভাসছে কচুরিপানার মতো। দিগন্ত বিস্তৃত জলের বুকে ভাসছে পালতোলা নাও। বক, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখির উড়াউড়ি। ট্রলারে যেতে যেতে হঠাৎই চোখে পড়বে জেলেদের মাছ ধরার ছোট ছোট ডিঙি। জলের গর্জন। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায় আকাশও। সামনে যতদূর চোখ যায় পানি আর পানি। বর্ষার পানি। বানের ঘোলা পানি।
আচ্ছা, জলের বুক চিরে যদি একটি মসৃণ সড়ক থাকতো! ওই পথ ধরে সোজা চলে যাওয়া যেত জলভ্রমণে! তাহলে কেমন হতো? বিষ্ময়কর হলেও এমনটি হাওরে এখন আর স্বপ্ন নয়!
কিশোরগঞ্জের হাওরের কয়েকটি উপজেলায় জলের বুকচিরে বয়ে গেছে সুপ্রসস্ত উঁচু পাকা সড়ক। চারদিকে দুই পাশে থৈ থৈ পানি। মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে পিচঢালা পাকা সড়ক। খানিক পর পর মনকাড়া সেতু! উঁচু থেকে দেখতে মনে হবে উত্তাল জলের উপর দিয়ে কালো মসৃণ কার্পেট বিছিয়ে কৃত্রিমভাবে এমন রাস্তা বানানো হয়েছে!
কিশোরগঞ্জের তিন হাওর উপজেলা ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে সদ্য নির্মাণ করা অলওয়েদার রোড বা সারা বছর চলাচল উপযোগী পাকা রাস্তাটি বদলে দিয়েছে হাওরের চেহারা। এমনিতে প্রতি বছর বর্ষায় জেলার নিকলী ও করিমগঞ্জে পর্যটকদের ঢল নামে।
এবার বর্ষায় হাওরের তিন উপজেলাকে স্পর্শ করে নির্মাণ করা পাকা সড়ক যেন আগের সব ইতিহাস ভেঙে দিয়েছে। পানির মাঝখান দিয়ে প্রশস্ত রাস্তায় দ্রুতগতিতে চলছে বাইক। উপরে বর্ষার সাজে আকাশ। দুই পাশে নীল জলরাশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন ছবি দেখে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে ছুটে আসছে মানুষ।
বিশেষ করে কিশোর-যুবকেরা বেপরোয়া গতিতে বাইক হাঁকিয়ে ছুটছেন হাওরে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন নৌকায় করে। করোনা মহামারিতেও অনেকে মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।
করোনা মহামারির কারণে এবার হাওরে বাইরের পর্যটকদের ভ্রমণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হাওরের পর্যটন স্পটগুলোতে বহিরাগত পর্যটকদের ঢল নামছে। পর্যটকদের আগমন ঠেকাতে পুলিশ ও প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না।
প্রশাসনের নির্দেশ না মেনে হাওরের উত্তাল জলে অবাধে ঘুরতে গিয়ে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে অনেকে। গত এক সপ্তাহে জেলার মিঠামইন, বাজিতপুর উপজেলায় পানিতে ডুবে মারা গেছেন তিন পর্যটক। এ ছাড়া পর্যটকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেলের চাপায় নিহত হয়েছেন এক নারী।
এ অবস্থায় হাওরের পর্যটন এলাকাগুলোতে বাইরের লোকজনকে গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া এবং হাওরে ঘোরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় পর্যটকদের ভ্রমণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে পর্যটন এলাকায় প্রবেশের সড়কগুলোতে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে পুলিশ।