বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সফরের জন্য ব্রিটিশ ভিসা দেয়া ফের শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে ব্রিটিশ ভিসা বন্ধ ছিল। ঢাকায় ব্রিটিশ ভিসার আবেদন গুলশানে অবস্থিত ভিএফএস সেন্টারে নেয়া হয়।
ঢাকা থেকে লন্ডনে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট চালুর পর ভিসাও চালু করেছে দেশটি। যদিও অনেক দেশ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে পর্যায়ক্রমে সব দেশই ভিসা চালু করবে।
বাংলাদেশ থেকে বিশেষ ফ্লাইটে বেশ কয়েকজন কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী ইতালি যাওয়ায় বেশ সমালোচনা হয়। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিসেপ্পি কোন্টে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ থেকে তার দেশে প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
এরপর বাংলাদেশ সরকার সব বিদেশগামী যাত্রীর জন্য সরকার নির্ধারিত সেন্টার থেকে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে। এতে বিমানযাত্রীরা ব্যাপক হয়রানির মধ্যে পড়ায় বাংলাদেশ সরকার ওই আদেশ সংশোধন করে।
নতুন আদেশ মোতাবেক, গন্তব্য দেশগুলোর বাধ্যবাধকতা থাকলেই শুধু আকাশ ভ্রমণে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক। ব্রিটেন ভ্রমণে কোভিড-১৯ সনদ বাধ্যতামূলক নয়।
বাংলাদেশ থেকে লন্ডন যাওয়ার তিনটি ফ্লাইট ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট ঢাকা ও লন্ডনের মধ্যে চলাচল করছে। এ হিসাবে দিনে গড়ে দুটি ফ্লাইট ঢাকা ও লন্ডনের মধ্যে চলাচল করছে।
সপ্তাহে কাতার এয়ারলাইন্সের চারটি, তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ৪টি এবং আমিরাত এয়ারলাইন্সের ছয়টি ফ্লাইট লন্ডন চলাচল করে। ব্রিটিশ ভিসা থাকলে তুরস্ক যেতে কোনো ভিসার প্রয়োজন নেই। ঢাকায় ভিএসএফ সেন্টারে গত ১৪ জুলাই থেকে ব্রিটিশ ভিসার আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে।
প্রতিদিন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভিসাপ্রার্থী আবেদন জমা করছেন বলেও জানা গেছে। তবে ব্রিটিশ সরকার ৫৭টি দেশের যাত্রীদের ওই দেশে অবতরণের পর ১৪ দিন যাত্রীর পছন্দের জায়গায় কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করেছে।
সে হিসাবে বাংলাদেশের সব যাত্রীর কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক। যাত্রীকে বোর্ডিং পাস নেয়ার আগেই কোথায় কোয়ারেন্টিনে থাকবেন, সেই ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা দৈবচয়নের মাধ্যমে আকস্মিক যাত্রীর দেয়া ঠিকানায় পরিদর্শনে গিয়ে কোয়ারেন্টিনে না পেলে এক হাজার পাউন্ড জরিমানা করবেন। দ্বিতীয় দিন না পেলে দুই হাজার পাউন্ড জরিমানা।
বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি ভিসা দেয় ভারত। প্রতিবছর প্রায় ১৪ লাখ বাংলাদেশি ভারতের ভিসা পায়। মহামারীর কারণে ভারতের ভিসা বন্ধ। পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিমান যোগাযোগ এখনও চালু হয়নি। সড়ক ও রেলপথও বন্ধ। এ কারণে ভিসা চালু হয়নি।
দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ভিসা কবে চালু হবে, সে ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে ভারতের ভিসা চালু হবে। ভারতীয় হাইকমিশনের কূটনীতিকরা যদিও অফিস করা শুরু করেছেন; তবে তাদের অনেক স্টাফ এখনও বাসায় থেকে অফিসের কাজ করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা এখনও বন্ধ থাকলেও জরুরি প্রয়োজনে ভিসার আবেদন গ্রহণ করছে। তবে কেন জরুরি তা উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে। ফলে প্রতিটি কেস বিবেচনায় নিয়ে ভিসার আবেদন গ্রহণ করা হয়। ভিসা সেকশনের কর্মকর্তারা এখনও নিয়মিত অফিস করছেন না।
তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার ইদানীং বাইরে বের হচ্ছেন। বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা সাধারণত ভাইরাসের ভয়ে বাইরে বের হন না। তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার সম্প্রতি গাইবান্ধা সফর করেছেন। তিনি সেখানে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।
মার্কিন সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প পরিদর্শন করেন। কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা হলেও কমছে। সে বিবেচনায় রাষ্ট্রদূত মিলার বাইরে বের হচ্ছেন। তবে তিনি স্বাস্থ্যবিধি সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করছেন।
বাংলাদেশিদের জন্য সেনজেন ভিসা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে। তবে সেনজেনভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতি চার সপ্তাহ পরপর করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন হাজারের ওপরে আছে। এই সংখ্যা ২০০-৩০০-র মধ্যে নেমে এলে সেনজেন ভিসা পুনরায় চালু হবে।
চীনের ভিসা চালু আছে। তবে চীনে কেউ যেতে চাইলে তার কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক। ভিসা চালু থাকলেও ঢাকা-গোয়াংজো ফ্লাইট স্থগিত আছে।
বাংলাদেশ থেকে বেশকিছু করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট স্থগিত করে চীন। তবে মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হলে দুই সপ্তাহ পর ফ্লাইট চালু হতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি নিয়মিত ফ্লাইট নেই। ঢাকা থেকে সৌদি ভিসা বর্তমানে বন্ধ আছে। বিশেষ কিছু ফ্লাইটে সৌদি থেকে কর্মীরা বাংলাদেশে ফিরে আসছেন। (যুগান্তর)