বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত এখন পর্যটকশূন্য। সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন উঠে গেলেও স্বাভাবিক কারণেই সৈকতে নেই পর্যটকের আনাগোনা। বিভিন্ন বিধি-নিষেধের বেড়াজালে বন্ধ হয়ে আছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাড়ে চারশ হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট। এই দুর্যোগে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ অবস্থায় স্থবির হয়ে পড়া পর্যটন শিল্পকে পুনরায় চাঙ্গা করতে সীমিত আকারে হলেও হোটেল, রিসোর্টগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পর্যটনসংশ্লিষ্টরা।
তবে এ জন্য সবার আগে পর্যটকদের সৈকতে আসতে দিতে হবে। তবেই পুনরায় মুখরিত হয়ে উঠবে দেশের প্রধান পর্যটন শহর কক্সবাজার। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজারে পর্যটকের আগমনের প্রশ্নই আসে না বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
কক্সবাজারে প্রতি বছর ২০ লাখেরও বেশি পর্যটক বেড়াতে আসেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে এই শহরের প্রায় সব কিছুই বন্ধ রয়েছে। এমনকি সৈকতে প্রবেশেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। যদিও ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। সীমিত আকারে হলেও সচল হতে শুরু করেছে অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাস, ট্রেন, লঞ্চ সীমিত আকারে সব ধরনের সতর্কতা মেনে চলছে। কিন্তু কক্সবাজারসহ দেশের পর্যটন শিল্প নিয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি।
কক্সবাজার হোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, গণপরিবহন-অফিসসহ অনেক কিছু সীমিত আকারে খুলে দিয়েছে সরকার। এর আওতায় যদি কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প সীমিত আকারে চালু করে দেওয়া হয়; তাহলে অন্তত এই খাতে নিয়োজিত লক্ষাধিক শ্রমিক ও কর্মচারী স্বস্তিতে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প এতে কিছুটা হলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে।
কক্সবাজার হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, সরকার সীমিত আকারে সবকিছু খুলে দিয়েছে। এখন বাকি আছে শুধু পর্যটন শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী কর্মহীন। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, স্বাস্থ্যবিধি কিংবা নীতিমালা তৈরি করে হলেও কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প যেন তারা খুলে দেন।
এদিকে সরকারি নির্দেশনা না আসায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সৈকতে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে টহল জোরদারসহ সবাইকে সচেতন করতে মাইকিং করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক রুবেল মিয়া বলেন, কাউকে সৈকতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতেই আমাদের এই উদ্যোগ।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে যেহেতু আন্তঃজেলা চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা আছে সেহেতু এ সময় পর্যটন নগরীতে মানুষের আসার প্রশ্নই আসে না। এছাড়া কক্সবাজারের করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সুতরাং সবকিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।