তৌফিক রহমান আপাদমস্তক সংস্কৃতিমনস্ক একজন ব্যক্তিত্ব। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নানামুখী অবদানের পাশাপাশি বাংলাদেশের ট্যুরিজম শিল্পের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন যার পরিনত দেখতে পর্যটন শিল্পে তার এতদূর হেঁটে চলা। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলেছেন তিনি।
বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এর পরিচালক দায়িত্বে কর্মরত রয়েছেন তৌফিক রহমান।
ট্যুরিজম শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি, অগ্রগতি, উন্নয়নের ধারা নিয়ে কথা হল টোয়াব পরিচালক তৌফিক রহমান এর সাথে…
পর্যটন শিল্পের সমসাময়িক অবস্থা…
দেশের অবস্থাই তো খারাপ। রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিরুপ প্রতিক্রিয়া পরেছে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উপর। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, টোয়াব; বাংলাদেশ পর্যটনের উন্নয়নের ধারাকে সচল রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে চলেছে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে খুবই চিন্তিত।
পর্যটন শিল্পের নানামুখী বিষয়বস্তু…
ভিসার সুবিধা আর নিরাপত্তা প্রদান পর্যটন উন্নয়নের মুখ্য বিষয়। ভিসার প্রক্রিয়া সবসময়ই একটু জটিল, তাই সময় বেশী লাগাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমিও শুনেছি যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশের বাইরে যাবার সময় ভিসা পেতে সময় লাগছে তবে অস্বাভাবিক পর্যায়ের কথা এখনও শুনে নি।
নিরাপত্তা এখন হুমকির উপর। বিদেশী সব মাধ্যমেই খবর ছড়িয়ে গেছে। বিদেশী পর্যটকরা নিরাপত্তার অভাবে বাংলাদেশ ভ্রমণে আসছে না। বিদেশী এম্বাসিগুলোও তাদের নাগরিকদের অতিব জরুরি কোন প্রয়োজন ব্যতিত বাংলাদেশ ভ্রমণে না আসার নির্দেশ দিয়েছে। এমতাবস্থায় পর্যটনের মৌসুমেও নিমেছে ধস। হরতাল-অবরোধ এর কারণে অধিকাংশ বিদেশী ভ্রমণকারীদের বুকিং বাদ হয়ে গিয়েছে। হোটেল শিল্পের ব্যবসারও মন্দা অবস্থা চলছে, সেখানেও প্রায় এ মৌসুমে নেমেছে ধস। এমতাবস্থায় পর্যটনের উন্নয়নের ধারা ধরে রাখা কষ্টকর।
রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোচনা…
বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে এমন সময়টা পর্যটন শিল্পের জন্য সবথেকে বড় দুঃখজনক। সরকার-বিরোধী দলের কর্মকাণ্ডের বিরুপ প্রত্রিক্রিয়া পরেছে আন্তর্জাতিক মহলে। ফলে বাংলাদেশের খারাপ ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে যা পর্যটন শিল্পের ক্ষতিসরূপ কাজ করবে।
তাছাড়াও ক্ষয়-ক্ষতিতো হচ্ছে দেশের মানুষের, দেশের আর রাজনীতিবিদরাতো মহা ব্যস্ত ফলে বিশ্ব জিডিপিতে প্রায় ১০ শতাংশ কন্ট্রিবিউট করছে, সে শিল্প পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান শিল্প কিংবা যে শিল্পে ১০০ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়—সে পর্যটনশিল্প আমাদের দেশে বরাবরই অবহেলিত।
আমাদের দেশে বর্তমানে পর্যটনশিল্পের যে ব্যাপক প্রসার হয়েছে, তার পেছনে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অবদানই সিংহভাগ—এ তথ্যটি কেউই অস্বীকার করবেন না আশা করি। কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, কুয়াকাটা, বান্দরবান, সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া ও খুলনায় আজ যে স্থাপনাগুলো গড়ে উঠেছে, তার বেশির ভাগেরই মালিক বেসরকারি পর্যটন উদ্যোক্তারা। এমনকি সুন্দরবনে বেড়ানোর একক কৃতিত্বও কেবলই বেসরকারি উদ্যোক্তাদের—এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
বিদেশি পর্যটকেরা এ দেশে মূলত বেড়ানোর জন্যই আসেন। সে ক্ষেত্রে এ জাতীয় হরতালে হোটেলের বাইরে যাওয়া যায় না বলে তাঁরা ক্রমশ এ দেশে আসার ব্যাপারে উৎসাহী হন না।
এমনিতেই এ রকম একেকটি বিদেশি পর্যটক দলকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে বছরের পর বছর যোগাযোগ করতে হয়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবেই তাদের আসার সম্মতি মেলে। কিন্ত এ রকম একেকটি রাজনৈতিক কর্মসূচিই তাদের নিরুৎসাহিত করতে যথেষ্ট। শুধু তাই নয়। যেহেতু এ জাতীয় হরতাল কর্মসূচি সাধারণত ঘোষণা করা হয়ে থাকে আগের দিন সন্ধ্যায়, সেহেতু পর্যটকদের আগে থেকে অবহিত করাও সম্ভব হয় না। ফলে হরতালে বিপাকে পড়ে পর্যটক, ভ্রমণ সংস্থাগুলো, সর্বোপরি দেশের বিকাশমান পর্যটনশিল্প। শুনতে হাসি পেলেও একটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। বেশ কয় বছর আগে এমনি বারবার হরতালের ঘোষণায় বিরক্ত হয়ে ইংল্যান্ডের একটি বড় ট্যুর কোম্পানি, যারা বাংলাদেশে নিয়মিত সিরিজ ট্যুর পরিচালনা করে তারা আগামী এক বছরের হরতালের আগাম তারিখসহ তালিকা আমাদের কাছে চেয়েছিল। কারণ, তাদের ধারণা ছিল, এটি কোনো বার্ষিক ইভেন্ট ক্যালেন্ডারের মতোই কোনো নির্দিষ্ট কর্মসূচি। পরে আমাদের কাছ থেকে আসল তথ্য জানার পর তারা বেশ হতাশ হয়ে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম সীমিত করে নেয়।
পর্যটনের অগ্রযাত্রা………
পর্যটনের অগ্রযাত্রায় হরতাল, অবরোধ বাঁধ দিয়েছে। (২০-২৫)% উন্নয়নের ধারা পিছিয়ে পড়েছে। যার জন্য রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশই দায়ী।
প্রতিবেশী দেশ নেপালে যখন মাওবাদীদের দ্বারা চরম রাজনৈতিক সহিংসতা চলছিল, তখনো কিন্তু পর্যটকেরা ছিল নিরাপদে। রাস্তায় যখন ১৪৪ ধারা জারি ছিল, কোনো গাড়িঘোড়াও নজরে আসেনি, তখনো তারা পর্যটকবাহী যানবাহনকে এর বাইরে রেখেছিল। আর এতে করে পর্যটকেরাও বেশ স্বস্তিতে এবং নিরাপদ বোধ করেছিলেন। নেপালের কাছ থেকে এ বিষয়ে আমরা শিক্ষা নিতেই পারি।
উভয়দলের মাঝে সমঝোতাই পারে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কমিয়ে আনতে। তাছাড়া এ্যাম্বুলেন্স এর ন্যায় বিদেশী পর্যটকবাহী যানগুলোকে হরতালের আওতামুক্ত, পর্যটকবাহী যানের সম্পূর্ণ আলাদা রং নির্ধারণ, হোটেল শিল্পের অগ্রগতির ধারা তরান্বিত করা পর্যটনের অগ্রযাত্রায় সম্মুখ ভূমিকা রাখবে।
বিরোধী দলের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ, দেশের পর্যটনশিল্প বিকাশের স্বার্থে হরতালের সময় দেশি-বিদেশি পর্যটকবাহী যানবাহনকে সংবাদপত্র, ওষুধ ও অ্যাম্বুলেন্সের মতোই হরতালের আওতামুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়ে পর্যটক এবং পর্যটনশিল্পকে সমুন্নত রাখতে বিশেষ অবদান রাখবে।
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে তার বিকাশেই কাজ করে চলেছেন তৌফিক রহমান। আমরা তার এ প্রচেষ্টাকে স্বাগতম সম্মাননা জানাই।