বিডি ট্রাভেল নিউজ ডট কম-এর বুধবারের বিশেষ আয়োজনে মুখোমুখি নাট্যনিদের্শক, নাট্যসংগঠক এবং বাংলাদেশ মূকাভিনয় ফেডারেশানের চেয়ারম্যান জাহিদ রিপন।
বিডি ট্রাভেল নিউজ ডট কম: একদিকে সরকারি চাকুরি অন্যদিকে বাংলাদেশের তরুণ ও তারুণ্য-ভরপুর নাট্যসংগঠন ‘স্বপ্নদল’-এর প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং সাথে সাথে নিদের্শনাও দিচ্ছেন নিয়মিত, কেমন করে সম্ভব করছেন এতো কাজ?
জাহিদ রিপন: এটি সম্ভব হচ্ছে সঠিকভাবে পরিকল্পনার জন্য। বলা প্রয়োজন, বাংলাদেশের নাট্যকলা বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভকারীদের মধ্যে প্রথম বিসিএস কর্মকর্তা আমি। তথ্য ক্যাডারভুক্ত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে প্রায় একযুগ ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রযোজকসহ বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরি করেছি। বর্তমানে তথ্য মন্ত্রণালেয়ের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউটে উপ-পরিচালক পদে কর্মরত আছি। কিন্তু আমি আমার জীবনে সর্বদাই থিয়েটারকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন বলে জ্ঞান করি, বলেই চাকুরির দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেও সুষ্ঠু কর্মসময়-পরিকল্পনার মাধ্যমে নিয়মিত নাট্যচর্চা করতে পারছি।
বিডি ট্রাভেল নিউজ ডট কম: বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে মঞ্চনাটকের ভুমিকা কী হতে পারে?
জাহিদ রিপন: প্রাচ্যকলার প্রাচীন নাট্যতাত্ত্বিক ‘নাট্যশাস্ত্র’কার ভরত বলেছিলেন পৃথিবীর সকল জ্ঞান, সকল শিল্প, সকল কৌশল এবং সকল কর্মের মিলিত শিল্পরূপই হচ্ছে নাট্য! তাই আমি মনে করি যে, আধুনিক ও রূচিবান মানুষ হতে গেলে থিয়েটারে সম্পৃক্ততা জরুরি, এমনকি দর্শক হিসেবে হলেও। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঢালাও-বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব বাজার-অর্থনীতির বিপরীতে ও ঐতিহ্যের সচেতনতায় নতুন প্রজন্মের রক্ষাকবচ হিসেবে, দেশপ্রেমের জাগরণে, স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যায়নে, নাগরিক কর্তব্য অনুধাবনে তথা সার্বিকভাবে মানবিক-আত্মিক-নৈতিক উন্নয়নে থিয়েটার নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এক্ষেত্রে থিয়েটারকর্মীদের সার্বক্ষণিক করার জন্য থিয়েটারেকে পেশাদার করার উদ্যোগ নিতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। বলা হয়, একটি দেশের উন্নয়নের স্মারক হিসেবে বিবেচিত হয় সে দেশের থিয়েটার। স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি নিজের চেষ্টায়ই বাংলাদেশের থিয়েটার বিশ্বমানে পৌঁছাতে পেরেছে এবং নানাভাবে দেশের জন্য প্রভূত সুনাম বয়ে এনেছে। আজ তাই থিয়েটারকে পেশাদার করার ক্ষেত্রে আবশ্যকীয় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ থিয়েটারকর্মীদের একধরণের প্রাপ্য কিংবা অধিকার বলেই গণ্য হতে পারে।
বিডি ট্রাভেল নিউজ ডট কম: ভ্রমণ করতে কেমন লাগে? পছন্দের তালিকায় সবার শীর্ষে যেই স্থানে ভ্রমন করতে যান এবং যেখানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন কিন্তু এখনো যাওয়া হয়নি।
জাহিদ রিপন: ভ্রমণ জীবনকে নবায়ন করার এক অনবদ্য উপাদান এবং তা নিঃসন্দেহে ভালো লাগে! তবে সবচেয়ে বেশি খুশি হই স্বপ্নদলসহ থিয়েটার মঞ্চায়ন-ভ্রমণের সুযোগ পেলে। পছন্দের তালিকায় দেশে সবার শীর্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সুন্দরবন।
আমি স্বপ্ন দেখি যে, ভ্রমণে গিয়ে গ্রিক ক্ল্যাসিক নাটকগুলো যেখানে মঞ্চস্থ হয়েছিল একদা, এথেন্সের সেই এ্যাক্রোপেলিস পাহাড়ের পাদদেশের এ্যারেনা মঞ্চে দাঁড়াবো একদিন এবং সফোক্লেসের ‘অয়দিপাউস’-এর বিখ্যাত উক্তিটি আবৃত্তি করবো, ‘সিথাইরোন, তুমি আমাকে হত্যা না করে বাঁচিয়ে রাখলে কেন? সেদিন যদি আমি মরতাম, তবে আজ আমি বাঁচতাম...।’
বিডি ট্রাভেল নিউজ ডট কম: বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প নিয়ে কিছু বলুন। কীভাবে এটা আরো উন্নত করা যায়? এর সাথে সংস্কৃতিকে যুক্ত করা যায় কীভাবে?
জাহিদ রিপন: পর্যটনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে, এমনকি পর্যটনে সফল বলে খ্যাত অনেক দেশের চেয়েই বাংলাদেশের রয়েছে অনেক বেশি আকর্ষণীয় পর্যটন-অনুষঙ্গ! কিন্তু দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য এর প্রচার-প্রচারণা হতাশাজনকভাবে কম। পাশাপাশি রয়েছে যাতায়াত, অবস্থান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে হতাশা। নানা দেশে, এমন কি আমাদের নিকটবর্তী মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরেও পর্যটকেদের জন্য দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের নানা উপকরণসহ মিনি-দেশপরিচিতি তুলে ধরার ব্যবস্থা আছে, যা পর্যটকেরা গভীর আগ্রহ সহকারে পর্যবেক্ষণ করে দেশটি সম্পর্কে নতুনভাবে আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন। আমাদের দেশেও এ রকম ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যময় সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারলে তাও পর্যটন-সফল নানা দেশের ঈর্ষার কারণ হতে উঠতে পারে নিঃসন্দেহে! উদাহরণ হিসেবে নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্ম-উদ্ভাবনার কথা বলা যায়, যা পৃথিবীর সভ্যতার প্রচলিত ইতিহাসকেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এছাড়া, পর্যটনের সঙ্গে আমাদের হাজার বছরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিবেশনাগুলোর উপস্থাপনাকে সম্পৃক্ত করা অত্যাবশ্যক। থিয়েটারের জায়গা থেকে বলতে পারি যে, বাঙলার নিজস্ব নাট্যরীতিসমূহ হাজার বছরের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের স্মারক এবং তা বিশ্বনাট্যধারার যে-কোনো রীতির তুলনায় স্বকীয় ও আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ। সুতরাং ঐতিহ্যের ধারায় উপনিবেশ-উত্তর বাঙলা নাট্যরীতির আধুনিক উপস্থাপনাসমূহও পর্যটকদের জন্য নিশ্চিতভাবেই বিশেষ আগ্রহের বিষয় হতে পারে।
ফরিদ আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বিডি ট্রাভেল নিউজ ডট কম