নির্জন সৈকতে ডলফিনের নৃত্য

Mar-29, 2020 বিডি ট্রাভেল নিউজ ডেস্ক পর্যটন কেন্দ্রের খবর

কক্সবাজার: করোনা আতঙ্কের কারণে চিরচেনা সেই সৈকতে নেই এখন প্রাণের কোলাহল। সমুদ্র স্নান, বালিয়াড়িতে দৌড়ঝাঁপ, আড্ডা, সারি সারি চেয়ারের ছাতার বাতাসে ওড়ার পৎপৎ শব্দ কিছুই নেই এখন সৈকতে।

এমন পরিস্থিতিতে সৈকতে একদল ডলফিনের ডিগবাজি আশা জাগিয়েছে মানুষের মনে। সৈকতে নির্জনতার সুযোগে একদম লোকালয়ের কাছে এসেই খেলায় মেতেছে একঝাঁক গোলাপী ডলফিন। যা দেখে রীতিমত মুগ্ধ সার্ফার ও দর্শনার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে দুইবার এমন দৃশ্য দেখা গেছে সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে হোটেল সায়মান বীচ রিসোর্টের সামনে। খেলা করতে করতে ডলফিনের দল গেছে সুগন্ধা সৈকতের দিকেও। স্থানীয়দের পাশাপাশি কয়েকজন সার্ফারও এ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন রীতিমত।

তাদেরেই একজন সার্ফার জয়নাল আবেদিন ভুট্টো। ভুট্টো বাংলানিউজকে বলেন, সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে হঠাৎ একদল ডলফিন ডিগবাজি দিচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর দেখা গেলো এর কাছেই আরেকটি ডলফিনের দল খেলা করছে। একটি দলে ছোট ছোট কয়েকটি ডলফিন ডিগবাজি দিয়ে দিয়ে পানিতে খেলা করছে। এগুলো কালো রঙের মনে হয়েছে।

‘অন্য দলটিতে ছিল বেশ  বড় বড় ডলফিন। এগুলো দেখতে রূপালি রঙের। ওই দলে সাদা ধূসর কয়েকটা ডলফিন দেখা গেছে। দুই দলে কম হলেও ২০টি মতো ডলফিন হবে’, যোগ করেন ভুট্টো।

ভুট্টো আরও বলেন, সৈকতে নিয়মিত সার্ফিং করি কিন্তু এ ধরনের দৃশ্য দেখিনি কোনোদিন। নির্জন সৈকতে হঠাৎ এক ঝাঁক ডলফিনের উপস্থিতি, ডিগবাজি আমাদের মুগ্ধ করেছে।

শুধু সার্ফাররা নন, ডলফিনের ডিগবাজির সেই বিরল দৃশ্য দেখার সুযোগ হয়েছে হোটেল সায়মন বীচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমানসহ অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীর।

হোটেলটির রিজারভেশন সুপারভাইজার রুপক বড়ুয়া দেবু বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশের এমন সংকটময় মুহূর্তে এমন বিরল দৃশ্য সত্যি আমাদের মনে আশা জাগিয়েছে। আমাদের সহকর্মীরা অনেকেই এমন দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।

ডলফিনের নাচানাচির বিরল এ দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করেন হোটেল সায়মনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, কাছ থেকে দেখার জন্য কায়াক নিয়ে ডলফিনের কাছে যেতেই দেখি ডলফিনের দল সুগন্ধা পয়েন্টের দিকে চলে যাচ্ছে। এর একটু আগে দেখা গেলো ডলফিনের অন্য একটি দল। মনে হচ্ছে একটি দল অন্য দলকে অনুসরণ করেই সামনেই দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

কক্সবাজারের স্থানীয় পরিবেশবিদ বিশ্বজিত সেন বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের আগ্রাসনের কারণে সামুদ্রিক প্রাণীগুলোও বাঁচার পরিবেশ হারাচ্ছে। আমাদের আচরণে জলজ প্রাণীকুলও বিরক্ত। সমুদ্র সৈকতে এত বেশি মানুষের ঢল, এমন কোলাহলের কারণে জলজ প্রাণীরাও অনিরাপদ বোধ করে। যেকারণে এতদিন এরা গভীর সমুদ্রে থেকেছে। যখনই কোলাহল থেমে গেলো, সৈকতে নির্জনতার সুযোগ পেয়ে কাছে চলে আসে ডলফিনগুলো। সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সামুদ্রিক কচ্ছপ ডিম পাড়তে আসতো, এখন সেই দৃশ্য দেখা যায় না। লাল কাঁকড়ার দৌড়ঝাঁপ এখন খুব একটা চোখে পড়ে না।

কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফখরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার। তবে অনেকের মুখে শুনেছি ডলফিনের কথা।

দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় জনসমাগম রোধে ১৮ মার্চ থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি হোটেল-মোটেলসহ সৈকতের আশেপাশে সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে কক্সবাজারের সঙ্গে দূরপাল্লার বাসচলাচলও বন্ধ রয়েছে। ফলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটক শূন্য। আর এ সুযোগে লোকালয়ের একদম কাছে চলে আসে ডলফিনের দল।

Related Post