করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বন্ধ রয়েছে সবধরনের উড়োজাহাজ চলাচল। গত ২১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ সময়সীমা পঞ্চমবারের মতো বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ নতুন সময়সীমা অনুযায়ী ৭ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত কোনো যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালিত হবে না।
যদিও এর আগে অভ্যন্তরীণ রুটে ৮ মে থেকে ফ্লাইট চলাচলের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় নতুন এ সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
১৬ মে’র পর কী হবে, কীভাবে ফ্লাইট পরিচালিত হবে— সবকিছু নির্ভর করছে ওই সময় করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর। তবে এ সময়ের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে বেশকিছু নির্দেশনা ঠিক করে রেখেছে বেবিচক। তারা বলছে, আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে। এক্ষেত্রে উড়োজাহাজের এক সিটে বসবেন যাত্রী, পাশের সিট থাকবে ফাঁকা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই ফ্লাইট পরিচালিত হবে- সেটা অভ্যন্তরীণ রুট হোক বা আন্তর্জাতিক রুট।
ইতোমধ্যে আইকাও’র নির্দেশনা অনুযায়ী একটি গাইডলাইন তৈরি করে দেশের এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বেবিচক। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হলে একজন যাত্রীর সঙ্গে অন্যজনের অন্তত তিন ফিট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এজন্য দেশের ফ্লাইট পরিচালনায়ও এমন নির্দেশনা মানতে বলা হয়েছে।
বেবিচকের নির্দেশনা অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল করলেও উড়োজাহাজের ভেতরে দুজন যাত্রী পাশাপাশি বসতে পারবেন না। যে সিটে যাত্রী বসবেন তার পাশের সিটটি রাখতে হবে ফাঁকা। যদি প্রতি সারিতে তিনটি করে মোট ছয়টি সিট থাকে তাহলে প্রতি সারির মাঝের সিটটি ফাঁকা রাখতে হবে। যদি প্রতি সারিতে দুটি করে চারটি সিট থাকে তাহলে একটি সিটে যাত্রী থাকবে, অপরটি থাকবে ফাঁকা।
বেবিচকের এমন নির্দেশনা অনুযায়ী একটি ফ্লাইটে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ যাত্রী নেয়া যাবে। তবে এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটের অধিকাংশই এটিআর মডেলের ছোট উড়োজাহাজ চলাচল করে। এতে পাশাপাশি দুটি সিট থাকে। বেবিচকের নির্দেশনা অনুযায়ী সিট প্ল্যান করলে মোট ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে। তবুও তারা ফ্লাইট চালুর বিষয়ে ইতিবাচক।
এদিকে বেবিচকের অপর এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উড়োজাহাজ উড্ডয়নের আগে এবং অবতরণের পরে প্রতিবার জীবাণুনাশক দিয়ে ডিসইনফেক্টেড বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত করার পর বেবিচকের প্রতিনিধিরা প্রক্রিয়াটি দেখে সার্টিফাইড করবেন, এরপরই উড়োজাহাজটি আকাশে ডানা মেলবে। পাশাপাশি প্রতিটি ফ্লাইটের যাত্রীদের ব্র্যান্ড নিউ (নতুন) মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস দিতে হবে।
বেবিচকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি ফ্লাইটের সামনে অথবা পেছনে একটি সারির সিট খালি রাখতে হবে। ফ্লাইটের মাঝে কোনো যাত্রী যদি অসুস্থ বোধ করেন তাহলে তাকে ওই সারিতে আলাদাভাবে বসাতে হবে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধের সময়সীমা ৭ মে থেকে বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। আশা করি ১৬ মে’র পর থেকে আমরা ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারব। ইউএস-বাংলা বেবিচকের সবধরনের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইট পরিচালনা করবে।
এদিকে দেশের বিমানবন্দরগুলোকে দেয়া বেবিচকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিমানবন্দরগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে জীবাণুনাশক ছেটাতে হবে, ঘণ্টায় সর্বোচ্চ তিনটি ফ্লাইট ছাড়ার অনুমতি পাবে। এছাড়া বিমানবন্দরের রানওয়েতেও উড়োজাহাজগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করবে। তিনটি ফ্লাইটের বেশি যাত্রী একসঙ্গে বিমানবন্দর টার্মিনালে থাকতে পারবে না। টার্মিনালের ভেতরেও সামাজিক দূরত্ব মেনে যাত্রীরা অবস্থান করবেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে চারটি এয়ারলাইন্স কোম্পানি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। তবে গত ২০ মার্চ থেকে পরবর্তী তিন মাসের জন্য ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। ১৫ মে পর্যন্ত সবধরনের ফ্লাইট চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ আকাশপথে এই চারটি বিমান সংস্থা চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশালে প্রতিদিন ১৪০টির মতো ফ্লাইট পরিচালনা করত। এসব ফ্লাইটে প্রায় ১২ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করতেন।
তবে স্বাস্থ্যবিধি ও বেবিচকের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন দিনে মাত্র ৭২টি ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হবে। সব ফ্লাইট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কেন্দ্রিক পরিচালিত হবে।
দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ২১ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক আকাশপথের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আকাশপথেও ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় বেবিচক।