করোনাভাইরাসের কারণে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পর্যটন খাত। দেশে–বিদেশে ভ্রমণের প্রায় সব বুকিং বাতিল হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যটন খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার।
প্রথম আলো: করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে পর্যটন খাতের ব্যবসার কী অবস্থা?
রাফেউজ্জামান: যেকোনো দুর্যোগে সর্বপ্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হয় পর্যটন খাত। চীনে গত নভেম্বরে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। চীনের পর সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় তা ছড়িয়ে পড়ে। শীতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি স্কুল–কলেজ বন্ধ থাকে। তাই বিদেশ থেকে অনেকে বাংলাদেশে আসেন এবং বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে অনেকে বেড়াতে যান। সে জন্য পর্যটনের ভরা মৌসুম ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এবার ভরা মৌসুমে আমাদের ব্যবসায় ধস নেমেছে। বর্তমানে ইউরোপের সব দেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও অনেক দেশে ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। অধিকাংশ দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ। মানুষজন আতঙ্কে বের হচ্ছে না। আবার ভ্রমণের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে অনেক দেশ। সে কারণে পর্যটকেরা পূর্বনির্ধারিত সব বুকিং বাতিল করছে। করোনার কারণে আমাদের ট্যুর অপারেটররা পঙ্গু হয়ে গেছেন।
প্রথম আলো: দেশীয় পর্যটকেরাও ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে ভ্রমণে যান। অভ্যন্তরীণ পর্যটনের অবস্থা কী?
রাফেউজ্জামান: অভ্যন্তরীণ পর্যটনও আমাদের ব্যবসার একটা বড় অংশ। সেখানেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। করোনা প্রতিরোধে কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কুয়াকাটায় জনসমাগম নিষিদ্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সিদ্ধান্তটিকে আমরা স্বাগত জানাই। আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ পর্যটনের জন্য আমরা কোনো রকম প্যাকেজ বিক্রি করব না। বিপণনও করব না। আমরা চাচ্ছি না, করোনাভাইরাসের এই সময়ে মানুষজন আমাদের ট্যুর অপারেটরদের মাধ্যমে দেশের কোথাও ভ্রমণে যাক।
প্রথম আলো: আপনাদের সমিতির সাত শ সদস্যের কত শতাংশ বুকিং বাতিল হয়েছে?
রাফেউজ্জামান: বিদেশে যাওয়া এবং বাংলাদেশে আসা বুকিংয়ের শতভাগ বাতিল হয়েছে। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বুকিং বাতিল হচ্ছে। ট্যুর অপারেটররা একটি প্যাকেজের মধ্যে উড়োজাহাজের টিকিট, হোটেল-মোটেল, গাইড, যাতায়াত, দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করে দেন। বুকিং বাতিল হওয়ায় সবাই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। সৌদি এয়ারলাইনসসহ হাতে গোনা কয়েকটি বিমান সংস্থা টিকিট বাতিলের পরও রিফান্ড ফি নিচ্ছে না। বাকি বিমান সংস্থাগুলো মাশুল নিচ্ছে। তাই ট্যুর অপারেটররা গ্রাহকদের বুকিং বাতিল না করে আপাতত স্থগিত করার অনুরোধ করছে। তবে গ্রাহকেরা তাতে সায় দিচ্ছেন না, সরাসরি বুকিং বাতিল করছেন। তাতে অনেক ট্যুর অপারেটকেই লোকসান গুনে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে।
প্রথম আলো: করোনার সংকটের মধ্যে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ট্যুর অপারেটররা কি কর্মী ছাঁটাইয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন?
রাফেউজ্জামান: করোনার প্রভাবে পর্যটন খাতের ভরা মৌসুমে ব্যবসা করতে পারেনি ট্যুর অপারেটররা। সে জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ২৫-৩০ শতাংশ কর্মীকে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে অবসরে পাঠাব। তবে মানবিক কারণে আমরা সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেছি। ইতিমধ্যে আমরা সদস্যদের আগামী দুই মাস কোনো কর্মী ছাঁটাই না করতে অনুরোধ জানিয়েছি। প্রয়োজনে ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রি করে হলেও কর্মীদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ করতে উদ্যোক্তাদের বলা হয়েছে। তারপরও যদি করোনা অব্যাহত থাকে, তাহলে আমরা টিকে থাকতে পারব না।
প্রথম আলো: চীনের অভিজ্ঞতা আমলে নিলে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমাতে দুই মাস লাগতে পারে। তার বেশিও লাগতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে পর্যটন খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের সহযোগিতা চান আপনারা?
রাফেউজ্জামান: ট্যুর অপারেটররা কোনো ধরনের পরিবেশদূষণ ছাড়াই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে খাতটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি প্রণোদনা দরকার। সেটি সম্ভব না হলে সহজ শর্তে বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হোক। তা ছাড়া অগ্রিম আয়কর ও সিভিল এভিয়েশনের বার্ষিক ফি মওকুফ করে দিলে উদ্যোক্তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। ৮০ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরও করোনার কারণে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী পিছিয়ে দিয়েছি আমরা। তাতে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে টোয়াব। ভবিষ্যতে সেই প্রদর্শনী সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সরকারের আর্থিক সহযোগিতা দরকার।
বিশেষ দ্রষ্টব্য * সাক্ষাতকারটি প্রথমআলো থেকে নেয়া হয়েছে।