হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে রানওয়েতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দেশীয় ব্যক্তি মালিকানার এয়ারলাইন্সের ২২টি পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ। এগুলোর কারণে দূর থেকে দেখলে যে কেউই বলবেন- বিমানবন্দরের রানওয়ে যেন উড়োজাহাজের বিশাল এক ডাম্পিং স্টেশন। এতে ঘিঞ্জি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে রানওয়েতে।
অথচ কার্গো ভিলেজ অ্যাপ্রোন থেকে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো সরিয়ে নিলে সেখানে কমপক্ষে সাতটি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যেত বলে দাবি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। সেই সঙ্গে কার্গো উড়োজাহাজগুলোতে মালামাল উঠানো ও নামানো সহজ হতো।
অবশেষে শাহজালাল বিমানবন্দরের এই ‘গলার কাঁটা’ অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এ ব্যাপারে গত সোমবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
বেবিচক কর্মকর্তারা বলছেন, রানওয়ের জায়গা দখল করে বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে উড়োজাহাজগুলো। এতে রানওয়েতে নিরাপদ বিমান চলাচলে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া উড়োজাহাজগুলো থেকে বকেয়া পার্কিং চার্জ বাবদ কোটি কোটি টাকা পাওনাও আদায় করা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে বিমানবন্দরের রপ্তানি কার্গোর সামনের অ্যাপ্রোনে থাকা পরিত্যক্ত ২২ বিমানের মধ্যে ১২টি অপসারণ করা
হচ্ছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধি এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে একটি বিমান সরানো হয়েছে। অন্যগুলোও সরানো হবে পর্যায়ক্রমে।
বিষয়টি নিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান গতকাল রবিবার আমাদের সময়কে বলেন, ‘রানওয়েতে পরিত্যক্ত কিছু উড়োজাহাজ স্বাভাবিক বিমান চলাচল কার্যক্রমে বিঘœ সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের ক্ষেত্রেও এগুলো প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে আমরা পরিত্যক্ত বিমানগুলো অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে গত বৃহস্পতিবার একটি অপসারণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যগুলোও অপসারণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
জানা গেছে, কোনো ঘোষণা ছাড়াই ২০১২ সালের ৩০ মার্চ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের রুটের ফ্লাইট কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বেসরকারি এয়ারলাইন্স জিএমজি। এর পর সাত বছর পার হলেও শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে পরিত্যক্ত দুটি এমডি-৮২ উড়োজাহাজ সরিয়ে নেয়নি কোম্পানিটি। শুধু জিএমজি নয়, কার্গো ভিলেজ অ্যাপ্রোনে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের আরও ২০টি উড়োজাহাজ।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ অ্যাপ্রোনে ২০১২ সালের মার্চে পরিত্যক্ত দুটি এমডি-৮২ (রেজিস্ট্রেশন নং-এস২এডিও, এস২এডিএম) ও দুটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ ফেলে রাখা হয়। পরবর্তীতে ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ দুটি বিক্রি করে দিলেও তা এখনো সরিয়ে নেওয়া হয়নি। একইভাবে অ্যাভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ এবং বিসমিল্লাহ এয়ারলাইন্সের একটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
একইভাবে চালু থাকা এয়ারলাইন্সগুলোও বকেয়া পরিশোধ করছে না। গত বছরের জুন পর্যন্ত অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ বাবদ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে এক হাজার ৪৪৭ কোটি, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে সব মিলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে বেবিচকের। বারবার তাগাদা দিয়েও বকেয়া আদায় করতে না পারায় সম্প্রতি এয়ারলাইন্সগুলোর বিরুদ্ধে পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি (পিডিআর) অ্যাক্ট ১৯১৩-এর আওতায় মামলা করে বকেয়া আদায়ের চেষ্টা করছে বেবিচক।
এ ছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চারটি এমডি-৮৩ উড়োজাহাজ পড়ে আছে কার্গো ভিলেজ অ্যাপ্রোনে। যেগুলোর রেজিস্ট্রেশন নং-এস২এইইউ, এস২এইজে, এস২এইভি ও এস২এইএইচ। একই সঙ্গে প্রায় দুবছর ধরে ইউনাইটেডের একটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজও পড়ে আছে। কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি চালু থাকা এয়ারলাইন্সের পরিত্যক্ত উড়োজাহাজও রয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দরে।
এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি এফ-২৮ ও চারটি ডিসি-১০ উড়োজাহাজ এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।