১১২ প্রবাসী কর্মী আবুধাবি বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসায় আবুধাবির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকেই দুষছে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। দুটি এয়ারলাইন্সে যাওয়া এই যাত্রীদের সরকারি ব্যবস্থায় আবার সেখানে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিতে সুপারিশ করেছে কমিটি। তারা আরও বলছে, দুই এয়ারলাইন্সের ভুল থাকলেও এ ঘটনার জন্য তারা দায়ী নয়।
বুধবার (২৬ আগস্ট) তদন্ত কমিটির উপস্থিতিতে তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে এসব তথ্য জানান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।
তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, আন্তমন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়। যদিও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য তাদের অতিরিক্ত এক কর্ম দিবস দেওয়া হয়। তারা প্রতিবেদন দিয়েছে, যা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
মফিদুর রহমান বলেন, ‘মূলত আবুধাবির ইমিগ্রেশন জটিলতার কারণে সেখান থেকে যাত্রী ফেরত এসেছে। দুবাই ও সারজাহ রুটে এমন ঘটনা ঘটেনি। আবুধাবির ইমিগ্রেশন বিভাগ তাদের পলিসি পরিবর্তন করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। সেখানে বলা হয়, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাদের যেতে হলে দ্য ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি অ্যান্ড সিটিজেনশিপের (আইসিএ) ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু আমাদের যাত্রীরা এ বিষয়টি মিস করে গেছেন। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্যও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও এয়ার অ্যারাবিয়া পায়নি। যার কারণে সে দেশের বিমানবন্দরে গিয়েও যাত্রীদের ফিরে আসতে হয়েছে।’
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘যাত্রীদের ফেরত পাঠানো কিংবা কী করলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সে দেশে ঢুকতে পারবে এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করলেও সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকেও তারা জানায়নি। আবুধাবির হঠাৎ পলিসি পরিবর্তন ও তাতে অস্পষ্টতা থাকার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। যার কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও এয়ার অ্যারাবিয়া আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানের যাত্রীদের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে।’
তবে এয়ারলাইন্স দুটিরও ত্রুটি ছিল বলে জানান বেবিচক চেয়ারম্যান। মফিদুর রহমান বলেন, “যাত্রীদের বোর্ডিং পাস ইস্যুর ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্সকে চারটি ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। আবুধাবি থেকে বোর্ডিং পাসের ক্লিয়ারেন্সের জন্য বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সকে চেক-ইন করার সময় ‘বিজিডি’ কোড এন্ট্রি দিতে হয়। তবে ‘বিজিডি’ কোড দিয়েও বোর্ডিং পাস না পাওয়া এয়ারলাইন্সের কর্মীরা ‘বিজি’ কোড দিয়ে চেষ্টা করেন এবং বোর্ডিং পাস ইস্যু করেন। তবে ‘বিজি’ কোডটি বুলগেরিয়ার জন্য, বাংলাদেশের জন্য না।”
সুপারিশ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘তদন্ত কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ফেরত আসা ১১২ জনকে সরকারি ব্যবস্থায় ফের আবুধাবি পাঠানোর ব্যবস্থা করা, দেশে অবস্থানরত অন্য প্রবাসীদের আবুধাবি যেতে এয়ারলাইন্স ও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মধ্যে তথ্য প্রবাহ বৃদ্ধি করা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলোতে সংশ্লিষ্ট দেশের সর্বশেষ পলিসিসহ অন্যান্য বিষয়ের হালনাগাদ তথ্য ও যাত্রীদের সেবা দিতে একটি অনলাইন পোর্টাল খুলে সেখান থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিস দেওয়া রয়েছে এরইমধ্যে।’
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ আগস্ট সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে দেশে ফিরে আসেন ৬৮ জন। আরও ৫০ জন ফেরেন এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে। আবুধাবি বিমানবন্দর থেকেই তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে তারা ইমিগ্রেশনের সামনে অবস্থান নেন। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় তারা বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। (বাংলা ট্রিবিউন)